এক্সক্লুসিভ সদরপুর

সদরপুরে চেয়ারম্যানের শিশুপুত্র রাফসান হত্যাকারীরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে


কামরুজ্জামান সোহেল
ফরিদপুরের সদরপুরে আলোচিত রাফসান বয়াতি (৯) হত্যাকান্ডের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে মামলার আসামীরা। সন্ত্রাসীদের হামলায় মারাত্বক ভাবে আহত রাফসানের মা দিলজাহান রতœা বর্তমানে ঢাকার নিউরো সাইন্স হাসপাতালে মৃত্যুশর্য্যায় রয়েছে। শিশুপত্রকে হারিয়ে এবং স্ত্রীর সংকটাপন্ন অবস্থায় আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বয়াতি এখন দিশাহারা অবস্থায় রয়েছেন। মামলার বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং পুলিশ মহাপরিদর্শককে ‘তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক’ চিঠি দেওয়া হলেও এখনো আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে চরম ক্ষোভের সৃৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মামলা তুলে নিতে আসামীরা ইউপি চেয়ারম্যানকে আরো বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের অন্য সদস্যরা। গত ১৮ মে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান বয়াতির সদরপুরস্থ বাড়ীতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। হামলকারীরা বাড়ী ভাংচুরের পাশাপাশি চেয়ারম্যানের শিশুপুত্র রাফসানকে কুপিয়ে হত্যা করে এবং তার স্ত্রীকে কুপিয়ে মারাত্বক ভাবে আহত করে। এ ঘটনার পর হামলাকারীদের একজন এরশাদ মোল্লা স্থানীয় জনগনের ধাওয়া খেয়ে বিশ্বজাকের মঞ্জিলের সামনের টিএন্ডটির টাওয়ারে উঠে পড়ে। একপর্যায়ে সেখান থেকে লাফিয়ে পড়ে সে আত্মহত্যা করে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, ঢেউখালী ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বয়াতির সাথে রাজনৈতিক শক্রুতা চলছিল এলাকার মোঃ মোস্তফা মৃধা ও নাজমুল ইসলাম বাবু মোল্লার সাথে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় চেয়ারম্যানের সাথে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিবাদ হয়। বিগত ১৬ মে একটি জমি কেনা নিয়ে নাজমুল ইসলাম বাবু চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানকে বলে, জমিটি না কিনতে এবং চেয়ারম্যান হলেই সব বিষয়ে নাক গলাতে নেই বলে হুমকি দেয়। এছাড়া জনৈক এরশাদ নামের এক ব্যক্তির পারিবারিক বিষয়ে সালিস নিরপেক্ষভাবে করলে এরশাদ ক্ষিপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিপক্ষের লোকজন এরশাদকে দিয়ে চেয়ারম্যানকে শায়েস্তা করতে ফন্দি আঁটে। চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বয়াতি ঢাকায় থাকার সুবাদে সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যানের সদরপুরের ভাড়া বাড়ীতে হামলা করে। সেই সময় চেয়ারম্যানের শিশুপুত্র রাফসান ও স্ত্রী দিলজাহান রতœা সেই বাসায় ছিলেন। হামলাকারীরা কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ধারালো অস্ত্রদিয়ে শিশু পুত্র রাফসানকে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় তার মা দিলজাহান রতœা এগিয়ে এলে তাকেও কুপিয়ে আহত করা হয়। বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেলে হামলাকারীদের ধাওয়া করে। এসময় হামলাকারীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও এরশাদ মোল্লা ধাওয়া খেয়ে টিএন্ডটির টাওয়ারে উঠে পড়ে। একপর্যায়ে জনরোষ থেকে বাচতে সেখান থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে এরশাদ মোল্লা। চেয়ারম্যান পুত্রকে হত্যার ঘটনায় জেলাজুড়ে বেশ আলোড়নের সৃষ্টি হয়। শিশু রাফসানের জানাজায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, স্থানীয় সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সনসহ হাজারো মানুষ।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদী হয়ে সদরপুর থানায় মোস্তফা মৃধা, নাজমুল ইসলাম বাবু মোল্লা, এরশাদ মোল্লা, ইমরান মোল্লা, রাকিব মোল্লা, মোঃ রুহুল আমিন, আলমগীর, রবিউল মোল্লা ও সামেলা বেগমকে আসামী করে মামলা করে। আলোচিত এ হত্যাকান্ডের দীর্ঘ আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও এ মামলার একজন আসামীকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে স্থানীয়দের সাথে মামলার বাদী মিজানুর রহমান বয়াতি হতাশ হয়ে পড়েছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বয়াতি অভিযোগ করে বলেন, আসামীরা প্রকাশ্যে এলাকায় ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের আটক করছেনা। আসামীরা প্রভাবশালী একটি মহলের সাথে আঁতাত করে এলাকায় বীরদর্পে গুরে বেড়াচ্ছে। তারা বিভিন্ন সময় মোটর সাইকেল নিয়ে আমার বাড়ীর সামনে দিয়ে শো-ডাউন করে। মামলা তুলে না নিলে আমাকে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। আসামীদের গ্রেফতার না করায় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি ও সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলা হয়। কিন্তু তাতেও আসামীদের গ্রেফতার করতে পারছেনা পুলিশ। তিনি বলেন, আমার প্রানপ্রিয় শিশু পুত্রকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে কুপিয়ে নৃসংশভাবে হত্যা করলো, আমার স্ত্রীকে কুপিয়ে মৃত্যুশর্য্যায় পাঠালোও আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় আমি মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। হামলার ঘটনার পর আমি নিজে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। বেশকিছু দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। একদিকে শিশু পুত্রকে হারিয়ে অন্যদিকে মৃত্যু শর্য্যায় স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে আমি এখন নিরুপায় হয়ে পড়েছি। স্ত্রীর চিকিৎসা খরচ যোগাতে গিয়ে এখন আমি নিঃস্ব হবার পথে।
আলোচিত এ হত্যা মামলার আসামীদের আটকের বিষয়ে সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত গোলদার বলেন, এ বিষয়ে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার বিষয়টি তদন্তাধিন রয়েছে। তদন্তের পর পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আসামীরা এলাকায় রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা যাবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *