বিশেষ প্রতিবেদক।
ফরিদপুর সদর হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডের ভেতরে গিয়ে রোগীর স্বজনকে কুপিয়ে মারাত্বক আহত করার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের মাঝে আতংকাবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের মাঝেও। এ ঘটনার জন্য দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে পুলিশের কাছে দাবী করেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ। গত বুধবার রাতে সদর হাসপাতালে ঢুকে মোঃ রাসেল (৩৮) নামের এক যুবককে কুপিয়ে মারাত্বক আহত করে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি দেবাশিষ নয়ন ও তার সহকর্মীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে ভর্তি থাকা হীরা বেগম বাদী হয়ে দেবাশিষ নয়ন, হাসপাতালের সিনিয়র নার্স ইলা রানী সিকদারসহ ৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। এদিকে, হাসপাতালের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ও নার্স জড়িত থাকার বিষয়টি অভিযোগ আসায় বৃহস্পতিবার জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শহরের টেপাখোলা এলাকার জনৈক হীরা বেগম অসুস্থ্য জনিত কারনে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বুধবার রাতে হীরা বেগম হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্স ইলা রানী সিকদারকে তার শরীর থেকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে রক্ত টেনে দিতে বলেন। এ নিয়ে হীরা বেগমের সাথে ইলা রানী সিকদারের কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে হীরা বেগমের স্বামী রাসেলের সাথেও তর্ক বিতর্ক হয়। এ নিয়ে ইলা রানী সিকদার তার পরিচতি কয়েকজনকে হাসপাতালে আসতে বলে। কিছুক্ষন পর ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি দেবাশিষ নয়নসহ আরও দুই তিনজন হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে রাসেলকে মারাত্বক ভাবে কুপিয়ে আহত করে চলে যায়। এ ঘটনার পর মারাত্বক আহত অবস্থায় রাসেলকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রাসেলের অবস্থা আশংকামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসকেরা জানান, রাসেলের বুকে ও ঘাড়ে মারাত্বক ভাবে জখম করা হয়েছে। হাসপাতালের ভেতর সন্ত্রাসী হামলার পর সেখানে থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে। হামলার বিষয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা হীরা বেগম অভিযোগ করে বলেন, রক্ত পরীক্ষার জন্য তার শরীর থেকে রক্ত নেবার কথা বলেছেন চিকিৎসক। সেই মোতাবেক তার শরীর থেকে রক্ত টেনে দেবার কথা বললে নার্স ইলা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এসময় তিনি বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং বলেন, তিনি এ কাজ করবেন না। এছাড়া তিনি বেশ খারাপ আচরন করেন। পরে তিনি তার পরিচিত কয়েকজন সন্ত্রাসীকে হাসপাতালে ডেকে নিয়ে আসেন এবং আমার স্বামীকে কুপিয়ে আহত করান।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে হাসপাতালের নার্স ইলা সিকদার, ঘটনার হোতা দেবাশিষ নয়নসহ তার সহযোগীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি দেবাশিষ নয়নর বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতয়ালী থানা ও সালথা থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। সে শহরের দক্ষিন ঝিলটুলী এলাকায় বসবাস করলেও তার গ্রামের বাড়ী জেলার সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নে।
এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে হাসপাতালে পুলিশী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি এম এ জলিল বলেন, হাসপাতালের অভ্যন্তরে ঢুকে রোগীর স্বামীকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামীদের আটকের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে। আশা করছি দ্রুতই তাদের আটক করা যাবে।
