জাতীয়

রওশন-কাদের দ্বন্ধ চরমে কৌশলী ভূমিকায় এরশাদ

বিশেষ প্রতিনিধি : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খেলা জমে উঠেছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরে। শুধু নির্বাচন নিয়েই দলের মধ্যে তিনটি ধারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গতকাল রোববার থেকে জাপার মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির ভূমিকা নিয়ে শুরু হয়েছে ইদুঁর-বেড়াল খেলা।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের ভূমিকা নিয়ে খোদ দলের ভিতরেই চলছে নানামুখী কানাঘুষা। আর এদিকে, ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণে কোন জোটে গেলে জাপা লাভবান হবে তা নিয়ে টাগ অব ওয়্যার শুরু হয়েছে দুই কো-চেয়ারম্যানের মধ্যে। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ যে কোন মূল্যে আওয়ামী লীগের সংগে জোটবদ্ধ থাকতে চান।

আর অন্যদিকে এরশাদের ভাই দলের অন্যতম কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের আওয়ামী লীগের ব্যর্থতার দায়ভার জাপার ঘাড়ে না নিয়ে শরীক হতে চান বিএনপির সাথে। জিএম কাদের দীর্ঘদিন যাবত ড. কামাল হোসেন.বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এবং বিএসপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তবে এনিয়ে জাপা নেতাদের মধ্যে রয়েছে সরব আলোচনা।

তাদের দাবী কৌশলী এরশাদ নাকি নিজ থেকেই ভাইকে একদিকে-বউকে আরেকদিকে রেখেছেন। আর জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ নিজের লাভ-ক্ষতির হিসেবটা করেই নির্বাচনী মাঠে থাকবেন। দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার দলীয় চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন হলেও আওয়ামী জোটের প্রতি তার রয়েছে অনিহা। দলের একাধিক নেতা জানান, বেগম রওশন এরশাদের নেতৃত্বে একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগের জোটের প্রতি আস্থাশীল রয়েছে।

এদের মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এলজিইডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙা, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মজিবুল হক চুন্নু,সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদসহ বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং কয়েকজন সংসদ সদস্য। আর এরশাদের এরশাদের উপর প্রভাব বিস্তার করে আছেন জিএম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ বেশ কয়েকজন প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্য।

জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলা ইনসাইডারকে জানান, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরশাদের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দুতের একটি লকমা তার গলায় ঝুঁলিয়ে দেয়া হলেও সরকার এরশাদের প্রতি চরম অবহেলা করেছে বলেতাদের ধারনা। এরশাদের জীবদ্দশায় তাঁর স্ত্রীকে বিরোধী দলীয় নেতা বানানো নাকি এরশাদকে চরম অপমান করা।

আর এসব বাস্তবতার কারণেই নাকি কৌশলী এরশাদ এবার ভেবে-চিন্তে পা ফেলবেন।েএকাধিক নেতা জানান, দলের অভিমানী জিএম কাদের দীর্ঘদিন যাবতই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সরকারের পকেট থেকে জাতীয় পার্টিকে বের করে আনতে। দলের নেতাদের মন্ত্রীত্ব ছাড়ার ব্যাপারেও নাকি তিনি ছিলেন আপোষহীন। কিন্তু সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের কারণেই নাকি জিএম কাদের সফল হতে পারেনি। তবে এসব নিয়েও দলের মধ্যে চরম মতবিরোধ রয়েছে।

নেতাদের দাবী, বার বার জাতীয় পার্টি ভাঙ্গনের মুখে পড়ার জন্য নাকি পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদ এককভাবেই দায়ী। জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, এক সময় কাজী জাফর আহমেদকে রাখা হয়েছিল বিএনপির সাথে সুসর্ম্পক বঝায় রাখার জন্য। এরশাদের নির্দেশমতে সেসময় কাজী জাফর সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এরশাদ আওয়ামী লীগের সাথে জোট করলে কাজী জাফরের সাথে সে সর্ম্পকে ছেদ পড়ে।

দলের নেতাদের বিশ্লেষনে জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদকে শেষ পর্যন্তও বুঝা মুস্কিল। তার মতে, হাওয়া বুঝে চলা এইচএম এরশাদ শেষ পর্যন্ত কোন দাবার গুটিতে চাল দেন তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *