বিশেষ প্রতিবেদক।
বিনা নোটিশে বসত বাড়ী ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ায় কান্নার রোল পড়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের ৭২ নং সাউতিকান্দা মৌজার বেশকিছু বাসিন্দাদের মধ্যে। গত শুক্রবার হঠাৎ করে বুলডোজার দিয়ে বেশকিছু পাকা দালান ও টিনের ঘর উচ্ছেদ করায় সেখানকার কয়েকশ পরিবার এখন খোলা আকাশের নীচে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় রেলওয়ের লোকজন এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রেল কতৃপক্ষ তাদের কোনপ্রকার নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে বুলডোজার দিয়ে তাদের বসত বাড়ী, গাছ পালা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। বসতবাড়ী ভেঙে গুড়িয়ে দেবার প্রতিকার এবং ক্ষতিপূরনের দাবী করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
স্থানীয় সাউতিকান্দা ও হিরালদি এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা এ এলাকায় বসত বাড়ী করে বসবাস করে আসছিলেন। সম্প্রতি, রেলওয়ে বিভাগ থেকে জমি অধিগ্রহনের কথা বলে নোটিশ প্রদান করে। জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কতৃপক্ষের একটি দল সরেজমিনে এসে অধিগ্রহনের তালিকা এবং ক্ষতিপূরন নির্ধারন করে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা জানতে পারেন তাদের অধিকাংশরই বাড়ী-ঘর অধিগ্রহন তালিকায় নেই। এরই মধ্যে শুক্রবার হঠাৎ করে বুলডোজার নিয়ে হাজির হয় রেলওয়ে কতৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। বিনা নোটিশে তারা একের পর একতলা, দোতালা, তিনতলা বিল্ডিং ও শতাধিক বসতবাড়ী ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। ক্ষতিগ্রস্থরা বাঁধা দিতে চাইলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। ক্ষতিগ্রস্থরা অভিযোগ করে বলেন, সকালে কিছু বুঝে উঠার আগেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চারদিক দিয়ে ব্যারিকেট দেয়। এসময় বুলডোজার ও ভেকু মেশিন দিয়ে একের পর এক ঘর বাড়ী গুড়িয়ে দিতে থাকে। ঘরে থাকা কোন আসবাবপত্র এমনকি জামা কাপড়ও তারা সরিয়ে নিতে পারেনি। বুলডোজারের চাপায় আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজসহ সকল কিছুই নষ্ট হয়ে যায়। স্থানীয় এলাকাবাসী শহিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান হাওলাদার, শাহজাহান শেখ, মোশারেফ হাওলাদার, হায়দার হোসেন, আছিয়া বেগম বলেন, আমাদের মূল্যবান সহায় সম্পত্তি এক শ্রেনীর কর্মকর্তারা খামখেয়ালীর মাধ্যমে জোর জবরদস্তি করে দখল করে নিচ্ছে। বর্তমানে জমির বাজার মূল্য ৫/৬ লাখ টাকা শতাংশ হলেও সরকারী মূল্য রয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। এ কারনে আমরা চরম ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি। তারা দাবী করেন, রেল কতৃপক্ষ উচ্ছেদের কোন প্রকার নোটিশ না দিয়ে এবং সময় নির্ধারন না করে তাদের বসত বাড়ী গুলো ভেঙে ফেলে। বসত বাড়ী ভেঙে ফেলার কারনে অনেকেই এখন একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে শাহিন হাওলাদার বলেন, আমি একজন দিনমজুর। অনেক কষ্টে বাড়ী করেছিলাম। আমার বাড়ীটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন আমি কোথায় যাবো, কি খাবো, কিভাবে বাঁচবো। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবী করি। মিজানুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, বসত বাড়ীর ঘর গুলো ভাঙার সময় আমাদের কাউকে বাড়ীতে ঢুকতে দেয়নি। ফলে ঘর থেকে কোন কিছুই বের করতে পারিনি। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে অন্যের বাড়ীতে রয়েছি।
এদিকে, বসত বাড়ী ভেঙে ফেলার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবীতে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা। এ দাবী নিয়ে রবিবার সকালে স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্থানীয়রা অংশ নেন।
ফরিদপুরের ভাঙ্গার রেলওয়ের রাস্তা সম্প্রসারনের জন্য দ্বিতীয় ধাপে বর্ধিত অংশের জন্য জমি অধিগ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক জমি অধিগ্রহনের জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু তালিকায় থাকা জমির ব্যক্তিদের কোন প্রকার নোটিশ না দিয়ে এবং ক্ষতিপূরন না দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের সাথে কথা হলে তারা এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।
