বিশেষ প্রতিবেদক।
বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অধিকতর সেবা প্রদানের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে লাগানো হচ্ছে ডিজিটাল সিষ্টেমের প্রি প্রেইড মিটার। ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে এ মিটার লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। যা চলমান রয়েছে। বিদ্যুতের প্রি পেইড মিটার লাগানো নিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ অফিসের কয়েক কর্মকতার মাস্তানী ষ্টাইলের আচরনের ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে হাজারো গ্রাহক। কোন প্রকার ঘোষনা না দিয়ে বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে মিটার লাগানোয় ক্ষুব্দ গ্রাহকেরা। তাছাড়া নতুন এ মিটার নিয়ে কোন গ্রাহক বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করলে তাদের সাথে খারাপ আচরন করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেক এলাকায় বিশেষ কিছু ব্যক্তির বাড়ীতে নতুন মিটার না লাগানোর বিষয়টিরও াভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার অসদাচারন ও প্রি পেইড মিটার বাতিলের দাবীতে গ্রাহকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে। আগামী ২জুন ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে ফরিদপুর নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে।
জানা গেছে, ফরিদপুর শহরের ৮২ হাজার গ্রাহকদের মাঝে বিদ্যুতের প্রি পেইড মিটার লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। গত ১৬ মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাথমিক ভাবে ৩০ মে কার্যক্রম শেষ হবার কথা থাকলেও অনেক এলাকায় নতুন মিটার লাগানোর কাজ শেষ না হওয়ায় তা চলমান রয়েছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় এ মিটার লাগানোর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় মিটার লাগানোর কাজ শুরু হয়। তাদের এ কাজে সহযোগীতা করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। শুরু থেকেই প্রচার প্রচারনা না থাকায় নতুন মিটার নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে আতংক দেখা দেয়। ফলে এ মিটার লাগানো নিয়ে গ্রাহকদের সাথে শুরুতেই ভুল বোঝাবুঝির সৃস্টি হয়। অভিযোগ রয়েছে, অনেক গ্রাহক নতুন মিটার সর্ম্পকে জানতে চাইলে কিংবা মিটার না লাগানোর কথা বললে, গ্রাহকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরন করা হচ্ছে। বেশীর ভাগ গ্রাহকদের অভিযোগ, ওজোপাডিকো-১ সার্কেলের উপ সহকারী প্রকৌশলী নুর আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে। গ্রাহকেরা অভিযোগ করে জানান, নুর ইসলামের ব্যবহার এতটাই খারাপ যে, একজন কর্মকর্তার মুখে এমন ভাষা বেমানান। কেউ নতুন মিটার সর্ম্পকে প্রশ্ন করলে তাকে হয়রানী করা হয়। কেউ মিটার না লাগাতে চাইলে খারাপ ভাষায় কথা বলার পাশাপাশি বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করারও হুমকি দেয়া হয়। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মাসুল গুনতে হবে বলেও হুমকি দেন। অভিযোগ রয়েছ্,ে যেসব এলাকায় বেশীর ভাগ গ্রাহককে নতুন মিটার লাগানো হয়েছে, সেখানকার কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তির বাড়ীতে মিটার লাগানো হয়নি। তাছাড়া নতুন মিটার লাগানো এবং পুরাতন মিটার সরানোসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেবারও প্রমান মিলেছে। ফলে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। নতুন মিটারে বিদ্যুতের বিল বেশী আসছে এমন অভিযোগ করে নিউ মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, নতুন মিটারে বিল হচ্ছে দ্বিগুন। আগে যেখানে বিল আসতো ৭০০/৮০০ টাকা। এখন সেই বিল বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। তাছাড়া টাকা ভরতেও নানা হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে। চকবাজার এলাকার এক গ্রাহক জানান, তিনি তার মিটারে পর্যাপ্ত টাকা ভড়ে কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে গিয়েছিলেন। বাড়ীতে এসে দেখতে পান তার বাসার বৈদ্যুতিক লাইন বন্ধ। ফ্রিজে যা খাবার ছিল সব পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা ভরলেও মিটারে টাকা শো করেনা। নতুন মিটার নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করলে সেই অভিযোগের বিষয়েও কোন সদুত্তর দেয়না বিদ্যুৎ বিভাগ। সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে অনেক সময় খারাপ আচরনের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
নানা অনিয়মের বিষয়ে উপ সহকারী প্রকৌশলী নুর আলম সিদ্দিকীর সাথে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এসব বিষয়ে জানতে ওজোপাডিকো-১ সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মতিয়ার রহমান জানান, প্রাথমিক অবস্থায় আমরা ৮২ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৩২ হাজার গ্রাহককে নতুন মিটার দিচ্ছি। ফলে কিছু গ্রাহকদের সাথে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রাহকদের কোন অভিযোগ থাকলে আমরা তা আমলে নিয়ে কাজ করবো। নানা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, মিটার লাগাতে গিয়ে কোন কর্মকর্তা গ্রাহকদের সাথে খারাপ আচরন করতে পারেন না। কেউ যদি মিটার না লাগাতে চায় সেই গ্রাহকের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে। কিন্তু কোন গ্রাহককে হুমকি দেওয়া যাবেনা। যদি এমন কোন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে উক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রমান সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
