ফরিদপুর কন্ঠ ডেক্স # রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার ও আশুলিয়া নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৯ আসন। ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ আসনটি বিএনপি’র দুর্গ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখন চালকের আসনে আওয়ামী লীগ। তাই বিএনপি চায় তাদের দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে। আর আওয়ামী লীগ চায় ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় দু’টি দলই এখন দু’মেরুতে। এ অবস্থান সত্ত্বেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সংসদের বাইরের বিরোধী দল বিএনপি রাজপথে ও প্রচার-প্রচারণায় না থাকতে পারলেও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় মুখর। সভা সমাবেশ ও শোডাউনে সময় কাটছে তাদের।
ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে কে মনোনয়ন পাবেন এ নিয়েই চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। চলছে ভোটার ও রাজনৈতিক মহলে নানা হিসাব-নিকাশ। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. এনামুর রহমান এনাম। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগের নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী ডা. দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন বাবুকে পরাজিত করে বিএনপি’র দুর্গে আঘাত হানেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ। কিন্তু ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল রানা প্লাজা ভবন ধসের পর মুরাদ জং ও রানা প্লাজার মালিক রানা ব্যাপক সমালোচিত হন। মুরাদ জং এর বদলে ভাগ্য খুলে যায় ডা. এনামুর রহমান এনামের। একাদশ নির্বাচনেও ডা. এনামুর রহমান এনাম আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দাবিদার।
ইতিমধ্যেই দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ কবীর। মনোনয়নের আশায় চেষ্টা তদবির করছেন ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাভার তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের সফল চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর। মাঠে নেমেছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) ফারুখ হাসান তুহিন, আওয়ামী যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আবু আহমেদ নাসীম পাভেল, তারা সবাই মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। আর সাবেক এমপি মুরাদ জংতো মাঠে রয়েছেনই। এদিকে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নিলে এ আসনে তাদের প্রার্থী অনেকটাই চূড়ান্ত। ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবু এ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হবেন এমন খবর পিএনপি নেতাকর্মীদের মুখে মুখে । তবে মেজর (অব.) মিজান ও বিএনপি থেকে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. এনামুর রহমান ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। তিনি মনোনয়ন পাচ্ছেন এমন প্রচারণা রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন, প্রতিদিনই জনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ চৌধুরী, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব। স্বাধীনতার পর এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক এমপি তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের বাবা আনোয়ার জং। ১৯৭৯ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিনের বাবা দেওয়ান মো. ইদ্রিস।
এরপর ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় আওয়ামী লীগ নেতা শামসুদ্দোহা খান মজলিশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী জমিদার অনামী প্রসাদ রায়কে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে দীর্ঘদিন এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হতে পারেনি। বিএনপি প্রার্থীর বার বার জয়ী হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে জামায়াতের বড় ভোটব্যাংক রয়েছে এখানে। ফলে এ আসনটি বিএনপি’র দুর্গ হিসেবেই পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামসুদ্দোহা খান মজলিশ বিএনপি প্রার্থী নিয়ামত উল্লাহ সাবুর কাছে হেরে যান।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন খান ইমু বিএনপি প্রার্থী ডা. দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন বাবুর কাছে হেরে যান। ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ। তিনি ওই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ডা. দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন বাবুর কাছে পরাজিত হন। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ বিএনপি’র দুর্গে আঘাত হানেন। তিনি বিএনপি প্রার্থী ডা. দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন বাবুকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।
২০১৩ সালের রানা প্লাজা ভবন ধসের পর নানা বিতর্কের কারণে মুরাদ জংকে বাদ দিয়ে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. এনামুর রহমান এনামকে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ডা. এনামুর রহমান এনাম। তবে ডা. এনাম ও মুরাদ জংকে নিয়ে দুটি গ্রুপ কাজ করছেন এলাকায়। এনামের সমর্থকরা জানিয়েছেন, ডা. এনামুর রহমানই আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন। কারণ হিসেবে তারা দেখছেন তিনি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। রাস্তা-ঘাটের সংস্কার করেছেন এবং স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা সহ নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বিরুলিয়া ব্রিজ ও সাভার-ধামরাইয়ের মেলবন্ধন বংশী নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ দ্রুত শেষ করে চালু করেছেন। এতে তার গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে মুরাদ জং সমর্থকরা বলছেন, সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদকে মনোনয়ন দেয়া হলে বিগত নির্বাচনে যেভাবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন একাদশ নির্বাচনেও তার চেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করতে পারবেন। তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদের পাশে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলা। সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দারও রয়েছেন মুরাদ জংয়ের সঙ্গে। মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফিরোজ কবীর মনে করেন বিএনপি নির্বাচনে এলে সাভারে ধার করা প্রার্থী দিলে ভরাডুবি হবে। তাই এবার দল তাকে মনোনয়ন দিবে বলে তার বিশ্বাস।
মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক জিএস ফারুখ হাসান তুহিন তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন। দল তাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ী হবে বলে মনে করছেন। এদিকে বিএনপি থেকে এ আসনে দলের মনোনয়ন পাবেন বলে নিশ্চিন্তে রয়েছেন ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন বাবু।
বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তার বিশ্বাস দল তাকে ছাড়া সাভারে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেবে না। তিনি মনে করেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা সঠিকভাবে ভোট দিতে পারলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভরাডুবি হবে। এ ছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন পরিবহন ব্যবসায়ী ও সাভার উপজেলার বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন। তিনি মনে করেন আসনটি বিএনপি’র ভোটব্যাংক। এ সরকারের আমলেই উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন তিনি। তাই দল থেকে তাকে মনোনয়ন দিলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হবেন। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ ও সাভার উপজেলা সভাপতি আবুল কালাম আজাদ।
