বিশেষ প্রতিবেদক।
আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফরিদপুর জেলা পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে ভিন্ন রকমের আমেজ তৈরী হয়েছে জেলাজুড়ে। বিগত দিনে জেলা পরিষদের নির্বাচনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও এবারের পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীর পাশাপাশি শক্তিশালী একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে থাকায় একদিকে ভোটের জমজমাট প্রচারনার পাশাপাশি কদর বেড়েছে ভোটারদের। যে কোন সময়ের তুলনায় এবারের নির্বাচন নিয়ে বেশ কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন। তিনি আনারস প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থ সম্পাদক মোঃ শাহাদাত হোসেন স্বতন্ত্র হিসাবে চশমা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। স্বতন্ত্র হিসাবে আরেকজন প্রার্থী রয়েছেন। যিনি সব নির্বাচনেই অংশ নেন। তিনি হলেন, বোয়ালমারীর উপজেলার সন্তান নুর ইসলাম সিকদার। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদানের পর থেকেই ফারুক হোসেন ও শাহাদাত হোসেন চষে বেড়াচ্ছেন গোটা জেলাজুড়ে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে একাধিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের পক্ষেও আওয়ামী লীগ-যুবলীগের বড় একটি অংশ মাঠে নেমেছেন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তাপ। ভোটকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই প্রতিপক্ষের সমর্থিত ভোটারদের বাড়ীতে হামলা, গুলিবর্ষন, পাল্টাপাল্টি হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলার নেতাদের মধ্যে বিভাজন তৈরী হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফারুক হোসেনের পক্ষে আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারনা চালালেও একটি অংশ গোপনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের সাথে আঁতাত করে চলছেন। জেলা ছাড়াও ৮টি উপজেলার চিত্র আরো ভয়াবহ। দলীয় প্রার্থীকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে ও গোপনে প্রচারনা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। জোর গুঞ্জন রয়েছে, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন সমর্থন দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদানের আগে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে শাহাদাতকে তার প্রার্থী হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। যদিও মুজিবুর রহমান নিক্সনের দাবী, তিনি আগে শাহাদাতকে সমর্থন দিলেও এখন আর দিচ্ছেন না। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথেই আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর-৪ আসনের তিনটি উপজেলার সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সনের সমর্থক সকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারগন স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাতের পক্ষে প্রকাশ্যেই ভোট প্রার্থনা করে চলছেন। ভোটের লড়াইয়ে এবার নতুন করে যুক্ত হয়েছে টাকার খেলা। টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান পদে ১ লাখ থেকে দেড়লাখ টাকায় ভোট বিকিকিনি হচ্ছে। আর সদস্য পদে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে ভোটারদের। ফরিদপুরের ৯টি উপজেলায় এবার সদস্য পদে ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে যারা নির্বাচন করছেন তাদের অনেকেই দেদারছে টাকা খরচ করছেন নির্বাচিত হতে। সালথা উপজেলা থেকে সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এক প্রার্থী নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভুল করেছি। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের টাকা দিতে দিতে ফকির হবার যোগার। এরচেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দাঁড়ালেও এত টাকা লাগতোনা। তিনি বলেন, তার প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। নগরকান্দা-ফরিদপুর সদর এলাকা থেকে মহিলা সদস্য পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আরেক প্রার্থীর অভিযোগ, তার প্রতিদ্বন্দ্বি যে প্রার্থী রয়েছেন সে ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছেন ভোটারদের। মধুখালী উপজেলা থেকে সদস্য পদে অংশ নেওয়া এক প্রার্থীর অভিযোগ, কয়েক প্রার্থী টাকার পাশাপাশি ভোট কনফার্ম করতে শপথও করিয়ে নিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ ফারুক হোসেনের সমর্থকদের দাবী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন লাখ টাকার বিনিময়ে ভোট কিনছেন আর শাহাদাতের দাবী ফারুক হোসেন শুধু টাকা দিয়ে ভোটই কিনছেন না, তিনি ভোটারদের হুমকি দিচ্ছেন তাকে ভোট না দিলে পস্তাতে হবে। ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী মোঃ পারুক হোসেনের সাথে জোর লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের। যিনিই নির্বাচিত হননা কেন, অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন।
এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, সংরক্ষিত মহিলা পদে ১২ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩৭ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার ১ হাজার ১শ ৮১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। জেলার ৯টি উপজেলায় এভিএমের মাধ্যমে এ ভোট গ্রহন হবে।
