বিশেষ প্রতিবেদক।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মৎস্যজীবী লীগের ফরিদপুর জেলা কমিটির আহবায়ক কাজী আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন নগরকান্দা-সালথা উপজেলার নেতারা। নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার কাছে। এ চিঠি দেওয়া নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে দুই দলের নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে শুধু নগরকান্দা-সালথা উপজেলায়ই নয়, দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে উত্তাপ ছড়িয়েছে জেলায়ও।
গত ২৯ মে নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে যে অভিযোগ করেছেন, তাতে ফরিদপুর জেলা মৎস্যজীবি লীগের আহবায়ক কাজী আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা, জামাত-বিএনপি নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। তিনি কখনোই আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গ সংগঠনের কোন পদে ছিলেন না দাবী করে চিঠিতে বলা হয়, মৎস্যজীবী লীগের পদ পেয়েই তিনি নগরকান্দা-সালথা উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাদ দিয়ে বিএনপি-জামাত এবং নৌকার বিরুদ্ধে থাকা লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করছেন। নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, কাজী আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তিনি ফরিদপুর-২ আসনের বর্তমান এমপি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর বিরুদ্ধে থাকা লোকদের ঐক্যবদ্ধ করে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। তিনি কোনদিনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না। কিভাবে তিনি মৎস্যজীবী লীগের আহবায়ক হলেন সেটা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, কাজী আব্দুস সোবহান কখনো আওয়ামী লীগ করেছে সেটা আমার জানা নেই। তাকে এলাকার মানুষ চেনেই না। হঠাৎ করে কিভাবে তিনি এত বড় পদ পেলেন তা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। দেলোয়ার হোসেন বলেন, কাজী আব্দুস সোবহান আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করছে। সে আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে কোন আলোচনা ছাড়াই মৎস্যজীবী লীগের কমিটি করছেন। সেই কমিটিতে বিতর্কিত ব্যাক্তিরা স্থান পাচ্ছে। ফলে দলীয়ভাবে ফরিদপুর-২ আসনের নৌকার ভোট ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, কাজী আব্দুস সোবহান সংবাদ সম্মেলন করে আমরা যারা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলেছেন। আমরা বলতে চাই, যে ব্যক্তি বিএনপির নেতাদের সাথে গোপন মিটিং করে সেই নেতা কখনোই আওয়ামী লীগ করতে পারেনা। আমাদের অশ্লীল ও কটু কথা বলায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অচিরেই নগরকান্দা-সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সভা থেকে সেখান থেকে কাজী আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হবে। কাজী আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান আওয়ামী লীগের নেতারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগে যারা সাক্ষর করেছেন তারা হলেন, ফরিদপুর-২ আসনের সংসদীয় এলাকা নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ আব্দুস সোবহান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন মিয়া, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফারুকুজ্জামান ফকির।
প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর কাছে পাঠানো আওয়ামী লীগে নেতাদের চিঠি বেশ গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় একনেতা। নামপ্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি এর সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে ফরিদপুর জেলা মৎস্যজীবী লীগ নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হতে পারে।
এদিকে, মৎস্যজীবি লীগের আহবায়ক কাজী আব্দুস সোবহান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গত শনিবার ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে কাজী আব্দুস সোবহান বলেন, দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি কুচক্রি মহল তাকে নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছেন। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা নিছক গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।
