ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২১ সালের বার্ষিক পরিক্ষায় অনিয়ম ও অবহেলায় শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের ১৩ জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ প্রদানের কার্যদিবসের সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে হচ্ছে বলে এ বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার হোসেন। অভিযোগের বিষয়টি নজরে এনে তাদের (১৩ শিক্ষকের) এ নোটিশ প্রদান করা হয় বলে তিনি জানান।
নোটিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন, বালক শাখার (দিবা) সহকারী প্রধান শিক্ষক ইকরাম আলী ফকির, সহকারী শিক্ষক মাহবুবুল/ আলম, দিলীপ কুমার বিশ্বাস, ইব্রাহীম মিয়া, সারোয়ার হোসেন, শামীমা আক্তার, জাহিমা খানম, তাসদিদা খানম।
বালিকা (প্রভাতি) শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দিন শেখ, ওয়াসিম ফকির, কবির হোসেন এবং ভোকেশনাল শাখার ট্রেড-ইন্সট্রাক্টর দেলোয়ার হোসেন ও নুরুন্নবী সরকার।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা সরকারি পাইলট (দিবা) বালক শাখার সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ইকরাম আলী ফকির সাংবাদিকদের জানান, ২২ ডিসেম্বর তিনি নোটিশ পেয়েছেন। সময়মতো বক্তব্য কর্তৃপক্ষর কাছে তিনি তুলে ধরবেন তার বক্তব্য।
ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার হোসেন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশের সত্যতা নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানান, গত ১১ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টের নম্ব্বর দেওয়ায় কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।
অ্যাসাইনমেন্টে নম্বর প্রাপ্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় সুধীজনদের মাঝে চরম হতাশা, মনোকষ্ট ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের খাতা ফের মূল্যায়নের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের খাতা ফের মূল্যায়নের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খাতাগুলো মূল্যায়ন করা হয় এবং তাদের নম্বর বৃদ্ধি পায়। এতে সংশ্নিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অ্যাসাইনমেন্ট খাতা মূল্যায়নে অনিয়ম ও কম নম্বর দেওয়ার বিষয়টি নজরে আসে এবং ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয় বলে জানান।
তিনি আরও জানান, কিছু শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতির দায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করতে পারে না বিধায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সংশ্নিষ্ট শিক্ষকদের ২০ ডিসেম্বর লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। আগামী সাত দিনের মধ্যে লিখিতভাবে তাদের সুস্পষ্ট কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে গত ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে স্কুল শীতকালীন বন্ধ থাকায় বিষয়টি মৌখিকভাবে সংশ্নিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছিল।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের (সভাপতি) আজিম উদ্দিন জানান, অ্যাসাইনমেন্টে নিয়ে বিদ্যালয়ে সমস্যার ঘটনাটি তিনি বিভিন্ন মহল থেকে জেনেছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত কারনে উল্লেখ্য, ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০২১ সালের বার্ষিক পরিক্ষার রেজাল্ট গত ১১ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয়। কিন্ত রেজাল্ট শিট সাজানো হয় অনিয়ম আর ভুলে ভরা। এনিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মহল থেকে অভিযোগ উঠে বিদ্যালয়ের কিছু অসাধু শিক্ষক এ ঘটনার সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত এবং ইচ্ছেকৃতভাবেই (ক্লাস শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট না পড়ার অভিযোগ) শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্টে কম নম্বর দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হন অভিভাবকগণ। অভিযোগ প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন থেকে দেখভাল করার আশ্বাস প্রদান করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে চলে শত শত শিক্ষার্থীদের কান্নার রোল। এনিয়ে অভিভাবক মহল হয়ে উঠেন উদ্বিগ্ন।
ঘটনা সবার দৃষ্টি গোচর হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় দেড়শতাধীক বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের (১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত) চলমান অনিয়ম ও শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতার নিয়ে লেখালেখি ভেসে উঠে।
এদিকে ফলাফল ঘোষণার দিনে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শিক্ষার্থীদের শান্তনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিল বিদ্যালয়ের অরাজনৈতিক চেতনার শিক্ষকেরা। অবশেষে প্রধান শিক্ষক হায়দার হোসেন বিষয়টি কৌশলে হয়ে ফের মূল্যায়ন পরিক্ষার আশ্বাস দিলে ঘরে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। পরে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা সচিত্র প্রতিবেদন তুলে ধরেন নিজেদের কর্তব্যরত পত্রপত্রিকা ও অনলাইনে।
