বিশেষ প্রতিবেদক।
ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামে হামলা চালিয়ে একজন সাংবাদিকের বাড়িসহ তিনটি বাড়ি ভাংচুর ও দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। এসময় ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। হামলাকারীরা গ্রামের ফসলি ক্ষেত নষ্ট করে বিভিন্ন ফসল তুলে নিয়ে গেছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টা হতে বেলা ১১টা পর্যন্ত বালিয়াচড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। হামলার একপর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই বাড়িঘরে আগুন দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ফায়ার সার্ভিস পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে বালিয়াচড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার মোল্যা, হান্নান মিয়া, গফফার ও হাবলু মাতুব্বরের বসত ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ সহ মালামাল লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুটি গ্রামের মোড়ে মোড়ে অবস্থান করছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ জানায়, গত ১৫ দিন আগে আলগী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কাউসার ভূঁইয়ার জমিতে বালিয়াচরা গ্রামের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে। এনিয়ে সোনাখোলা গ্রামের কতিপয় ছেলে তাদের বাধা দিলে দুই গ্রামের যুবকদের মধ্যে মারামারি হয়। এতে উভয় গ্রামের মিরহাজ, আলামিন, শাওন, হাসিবুল, সাঈদ ও নাঈম আহত হয়। বিষয়টি নিয়ে সোনাখোলা ও বালিয়াচরা গ্রামের মাতব্বরেরা সালিশ বৈঠক করে মীমাংসার চেষ্টা করেন। এরমাঝে গত রোববার বিকেলে সোনাখোলা গ্রামের শাওনের নেতৃত্বে বালিয়াচরা গ্রামের মিরহাজের উপর হামলা করে। তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরেরদিন ২১ মার্চ সোমবার সোনাখোলা গ্রামের একজন ভ্যানচালকের উপর হামলা হয়। এরপর থেকেই সোনাখোলা গ্রাম থেকে মাইকে হামলার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিলো। মঙ্গলবার সকালে দুই গ্রামের শত শত লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ফসলের মাঠে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় সাংবাদিক এটিএম ফরহাদ বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে সোনাখোলা গ্রাম হতে দল বেধে বালিয়াচড়া গ্রামে হামলা করা হয়। বালিয়াচড়া গ্রামের প্রবেশমুখেই তার বাড়ি। হামলাকারীরা তার বাড়ি ভাংচুরের পর আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর আ. গাফফার মিয়া ও হাবলুর বাড়ি ভাংচুর করে এবং পাঁচটি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
নান্নু বলেন, মাইকে হামলার ঘোষণার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসিকে বিষয়টি জানানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজিমউদ্দিন বলেন, তিনি গ্রামবাসীর নিকট থেকে হামলার ঘোষণার খবর জানতে পেরে থানার ওসিকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান।
তবে ভাঙ্গা থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, হামলার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে হামলার আগে মাইকে হামলার ঘোষণার কোন খবর তিনি পাননি। তিনি বলেন, সংঘর্ষে নিয়ন্ত্রণে আনতে যেয়ে তিনজন পুলিশ আহত হন। পরবর্তীতে জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। এছাড়া আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সেখানে যায়। বর্তমানে দুটি গ্রামের মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান করছে।
সংঘর্ষে আহত রুবেল, জালাল, সালেহা বেগম, খোকন মুন্সি, রাজ্জাক শেখ, ওমর আলী মোল্যা, ইমরান মাতুব্বর, এনামুল শেখ, লালন হরকরা, রমজান শেখ, হিট মাতুব্বর, মিজানুর মুন্সি, বোরহান শেখ, জাকির ও বিল্লাল হোসেনকে স্থানীয় জনতা উদ্ধারের পর ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।