বিশেষ প্রতিবেদক।
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অসন্তোষ চলছে। ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন রাজনীতিতে কোণঠাসা হওয়ার পর থেকে নানা গ্রুপিংয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জেলা আওয়ামী লীগ। নেতৃত্বহারা হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বর্তমান জেলা কমিটি। দলীয় কোনো কর্মসূচীতে দেখা মিলছে না জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদককে। পর্দার আড়ালে থেকে চালাচ্ছেন গ্রুপিং। জেলা যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ সহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোও ভুগছে অভিভাবকহীনতায়।
তাই ফরিদপুর জেলা কমিটির ওপর আবারও ক্ষুব্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রুত সময়ের মধ্যে দ্বন্দ মিটিয়ে মিল না হলে প্রয়োজনে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১২ জুন) গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে এই নির্দেশ দেন দলীয় সভাপতি। ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে জেলার সভাপতি সুবল সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হেসেনের মধ্যে বিরোধ চলছে।
এ বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় আলোচনা উঠলে এই নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের জমা পড়া পৃথক দুটি কমিটিও বাদ দিতে বলেন শেখ হাসিনা।
তবে ওই জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে বসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয় করার কথাও বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিরোধ নিষ্পত্তি, সমন্বয় করার চেষ্টা বিফলে গেলে সিনিয়র সহ-সভাপতিকে আহ্বায়ক করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে দিতে বলেন তিনি।
শহর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে ফরিদপুর জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নতুন বিরোধে জড়িয়েছেন। তবে বিরোধ নিষ্পত্তির সব চেষ্টা করতে বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক সদস্য আরও বলেন, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে দলাদলি ও দ্বন্দ্ব নিরসন করতে ঢাকায় ডেকে পাঠানোর নির্দেশও দেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে বিরোধ নিষ্পত্তি না হলে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মনোনয়ন বোর্ডের এক সদস্য জানান, যেখানেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরোধ সেসব জেলা-উপজেলা ও পৌর কমিটির নেতাদের মধ্যে রয়েছে তাদের ডেকে সমন্বয় ও নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করতে হবে। তাতেও সম্ভব না হলে বিরোধপূর্ণ ইউনিটের নেতাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দিতে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মনোনয়ন বোর্ডের আরেক সদস্য বলেন, বিভাগীয় দায়িত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয় করে আওয়ামী লীগের যেসব কমিটি করা হয়েছে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করে দিতে বলেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, আওয়ামী লীগ যে ক্যাটাগরি বিবেচনা করে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় সেখানে প্রয়াত সংসদ সদস্যদের পরিবারের কেউ যোগ্য নন বলেই তারা মনোনয়ন পাননি।
তিনি বলেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে মনোনয়ন বোর্ড গুরুত্ব দেয়। সেগুলো হলো ক্লিন ইমেজ ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা, রাজনৈতিক ত্যাগ-নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ও কোনও ধরনের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে কীনা এসব।
প্রসঙ্গত, ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক গত ১৪ এপ্রিল, সিলেট- ৩ আসনের সংসদ সদস্য ১১ মার্চ এবং কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু গত ১৪ এপ্রিল মারা যান। ওই তিন আসনে আগামী ২৪ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে আগা খান মিন্টু, সিলেট -৩ আসনে হাবিবুর রহমান এবং কুমিল্লা-৫ আসনে আবুল হাসেম খানকে। মনোনয়ন পাওয়া আগা খান মিন্টু শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, হাবিবুর রহমান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং আবুল হাসেম খান বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
তিনটি শূন্য আসনের কোনটিতেই প্রয়াত সংসদ সদস্যদের স্ত্রী বা আত্মীয় কাউকে মনোনীত করা হয়নি।