বিশেষ প্রতিবেদক
চারমাসের অন্তস্বত্ত্বা গৃহবধু চাঁদনী আক্তার (২২) কে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্বামী ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন চাঁদনীর পরিবার। গত ১৯ নভেম্বর চাঁদনীর লাশ উদ্ধার করা হয় বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের রাগদি গ্রামের স্বামীর বাড়ী থেকে। চাঁদনীর লাশ উদ্ধারের পর স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে গেছে।
জানা গেছে, ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামের সৌদিপ্রবাসী লুৎফর শেখের কন্যা চাঁদনী আক্তারের তিন বছর আগে বিয়ে হয় বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের রাগদি গ্রামের জনৈক হান্নান মোল্যার ছেলে ওমর ফারুকের সাথে। চাঁদনী ফারুক দম্পত্তির সংসারে হুমাইরা নামের দেড় বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের সময় ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয় যৌতুক হিসাবে। বিয়ের পর থেকেই টাকার জন্য চাঁদনীকে নানাভাবে চাপ দিতো স্বামী ওমর ফারুক। ব্যবসা করার কথা বলে বিভিন্ন সময় সৌদিপ্রবাসী শশুড়ের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা ওমর ফারুক। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করেই সৌদি থেকেই জামাই ওমর ফারুককে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন লুৎফর রহমান। তারপরও চাঁদনীর উপর নির্যাতন চলতেই থাকতো বলে জানান তার পরিবারের সদস্যরা। চাদনী মারা যাবার দশদিন আগেও ওমর ফারুক টাকার জন্য চাপ দেয় চাঁদনীকে। সেই কথা চাঁদনী তার মা ও দাদাকে জানায়। ১৯ নভেম্বর চাঁদনীকে নির্মম নির্যাতন শেষে হত্যা করে লাশটি ঝুলিয়ে রাখে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। পরে চাঁদনীর পরিবারকে জানানো হয় অসুস্থ্যতার খবর। চাঁদনীর স্বজনেরা ওমর ফারুকের বাড়ীতে গেলে তাদের চাঁদনীকে দেখতে দেওয়া হয়নি। এমনকি চাঁদনীকে কোথায় রাখা হয়েছে তাও জানানো হয়নি। পরে চাঁদনীর স্বজনেরা জানতে পারেন চাঁদনীর লাশ বোয়ালমারী থানায় রাখা হয়েছে। সেখানে গিয়ে তারা চাঁদনীর লাশ দেখতে পান। চাঁদনীর সুরতহাল রিপোর্টে জয়নগর পুলিশ ফাঁড়ির এনচার্জ সুব্রত জানান, লাশের গায়ে আঘাতের কোন চিহৃ নেই। অথচ যারা চাঁদনীর লাশের গোসল করিয়েছেন এমন একাধিক মহিলা জানান, চাঁদনীর বুকের দুইপাশে এবং দুই পায়ের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত আঘাতের চিহৃ রয়েছে। লোহা জাতীয় কোন কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে বলে তারা জানান। এছাড়া গলায় দাগ রয়েছে। তাদের দাবী, নির্যাতনের পর চাঁদনীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এদিকে, এঘটনার পর চাঁদনীর স্বামী ওমর ফারুক ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যায়। গত মঙ্গলবার বোয়ালমারীর দাদপুর ইউনিয়নের রাগদি গ্রামে চাঁদনীর শশুড় বাড়ীতে গিয়ে পাওয়া যায় ওমর ফারুকের দুই বোনকে। বিষয়টি নিয়ে তারা তেমন কিছুই বলতে পারেনি। ঘটনার সময় তারা বাড়ীতে ছিলনা বলে জানান। বাড়ীর অন্য লোকেরা কোথায় আছে জানতে চাইলে তারা জানেন না বলে জানান। চাঁদনী ও তার স্বামী ওমর ফারুক যে ঘরে থাকতেন সেই ঘরটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তারা জানান, চাঁদনী ভালো একটি মেয়ে ছিল। সে কখনো কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। ইচ্ছে করে সে কখনো বাড়ীর বাইরে বের হতোনা। স্থানীয় একাধিক মহিলা জানান, চাঁদনীর স্বামী, মা, ননদ ও দেবর নানা সময় তার উপর মানসিক ও শারিরিক নির্যাতন করতো। এদিকে, চাঁদনীকে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন চাঁদনীর স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী। তারা চাঁদনীর হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান। তারা বলেন, চাঁদনী আত্মহত্যা করেছে বলে জানানো হলেও পুলিশ আসার আগেই কেন লাশটি নামানো হলো। লাশের জামা কাপড় কেন পরিবর্তন করা হলো। এ ঘটনার পর কেন চাঁদনীর স্বামী, শাশুড়ী ও দেবর বাড়ী থেকে পালিয়ে গেল। কেন তারা চাঁদনীর জানাজায় আসলোনা। চাঁদনীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো কালো আঘাতের চিহৃ রয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় যৌতুকের টাকা চেয়ে না দিতে পারার কারনে চাঁদনীকে নির্মম নির্যাতন শেষে তাকে হত্যা করা হয়েছে। একসাথে দুইটি প্রান কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কেননা চাঁদনী চারমাসের অন্তস্বত্বা ছিল। এ ঘটনায় সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান চাঁদনীর স্বজনেরা।
জয়নগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুব্রত জানান, চাঁদনীর মৃত্যুর বিষয়টি ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পর আসল রহস্য জানা যাবে। তবে, প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে লাশের গায়ে আঘাতের কোন চিহৃ দেখা যায়নি। চাঁদনীর লাশ তার নিজ বাড়ী কানাইপুরে আনা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। স্থানীয় মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে স্থানীয় গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়।
